বাসর ঘরে ঢুকেই তানভীর নতুন বউকে বললো, চলো, এবার আমরা খেলাধুলা শুরু করি।

 

বাসর ঘরে ঢুকেই তানভীর নতুন বউকে বললো, চলো, এবার আমরা খেলাধুলা শুরু করি।


বাসর ঘরে ঢুকেই তানভীর নতুন বউকে বললো, চলো, এবার আমরা খেলাধুলা শুরু করি। 
তানভীরের বউ তরু স্বামীর কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। বেচারি আর চোখ তুলতে পারে না। এ কী নির্লজ্জ মানুষরে বাবা!! কই বাসর রাতে এসে একটু দুষ্টু মিষ্টি কথা বলবে,রোমান্টিক কথা বলবে, তা না, শুরুতেই খেলাধুলার কথা। 

তরু লজ্জা লজ্জা গলায় মিনমিন করে, বাড়িভর্তি মানুষ। আর আজ সারাদিন তো কম ধকল গেলো না।খেলাধুলা না হয় আজ থাকুক। আজ আপনি ঘুমান। 

তানভীর হো হো করে হাসতে শুরু করলো। তরু অবাক হয়ে ভাবে, এই লোকটা এতো নির্লজ্জ কেন? নতুন বউয়ের সামনে যে একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে থাকতে হয়, সেটাও জানে না নাকি? 

হাসতে হাসতে তানভীর বলে, আরে বউ,তুমি আমারে টায়ার্ডনেস এর গল্প শোনাও? তুমি জানো, আমার কত এনার্জি? আমার কতো কারেন্ট? একবার আমরা বাকৃবিতে একটা ফিল্ড স্টাডি করতে গেছিলাম। সবাই যখন ফিশ মিউজিয়ামে মাছ দেখছে, আমি তখন তিন তলার ছাদ থেকে দিলাম এক লাফ। আমার কতো কারেন্ট, বুঝতেসো? ওসব টায়ার্ডনেস এর গল্প বাদ, খেলা আজ রাতেই হবে। বাসর রাতে না খেললে বিয়ে করার অর্থ কী? আমি তো খেলার জন্যই বিয়ে করসি।

এবার তরু ভয় ভয় চোখে তানভীরের দিকে তাকায়। 

তানভীর তরুকে অভয় দেয়, আরে ভয় পাইওনা। প্রোটেকশন আমি আগেই রেডি করে রাখসি।আজ প্রথম রাত। তোমার সাথে আমি সারারাত টেস্ট ম্যাচ খেলবো না। অতো কারেন্টও নাই আমার। এক ঘন্টার একটা টি টোয়েন্টি ম্যাচই খেলবো। 

এসব কথা শুনে তরুর কান গরম হয়। কী ভয়ঙ্কর নির্লজ্জ মানুষের সাথে ওর বিয়ে হলো রে বাবা!! আবার একটু একটু ভালোও লাগে!! ওর বান্ধবী নীলার বিয়ের দুই মাস পরেও ওর বর খেলাধুলার কথা মুখে আনে নাই। এটা নিয়ে নীলার সে কী টেনশন!! সব ঠিকঠাক আছে তো?

যাক, ওকে অন্তত এই টেনশন করতে হচ্ছে না। একেবারে আসল পুরুষের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে!! 

ইউনিভার্সিটি লাইফে তানভীর ছিলো একেবারে খাঁটি চিরকুমার। তানভীরের ধ্যান এবং জ্ঞান দুটোই ছিলো খেলা। ক্রিকেটে আইপিএল, বিপিএল থেকে শুরু করে ফুটবলের চ্যাম্পিয়নস লীগ, লা লিগা প্রতিটা টুর্নামেন্টের পয়েন্ট টেবিল তানভীর মুখস্থ বলে দিতে পারতো। আমরা শেষমেশ পত্রিকায় খেলার পাতা পড়াই বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। তানভীর ছিলো আমাদের কাছে এক জীবন্ত স্পোর্টস ম্যাগাজিন। কবে কার খেলা, কটার সময়, কোন চ্যানেলে দেখাবে, এসবের জন্য আমাদের পেপার দেখতে হতো না। তানভীরকে জিজ্ঞাসা করলেই চলতো। 

সেই তানভীর গ্র্যাজুয়েশনের পর জিদ ধরলো, এই জীবনে ও বিয়ে করবে না। বিয়ের পর বৌ আর ওকে রাত জেগে খেলা দেখতে দেবে না, এই ছিলো তানভীরের যুক্তি। 

তানভীরের এই সিদ্ধান্ত শুনে ওর বড় বোন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। আঙ্কেল রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন। আন্টি মাথা চাপড়ান আর বলেন, কে আমার এই নিষ্পাপ ছেলেটার মাথা খাইলো? কে? তাঁর এই একটাই ছেলে। এই ছেলে বিয়ে না করলে বংশের বাতি জ্বালাবে কে?

শেষমেশ আমরা তানভীরকে বোঝাতে শুরু করি। আরে ব্যাটা, বিয়ের পর রাত জেগে খেলা দেখবি কেন? বিয়ের পর তো রাত জেগে খেলবি। 

তানভীর লজ্জা পায়। ছেলেটা একেবারে ফার্স্ট ইয়ার থেকেই একটু লাজুক। এখনও তাই আছে। 

যাই হোক, শেষমেশ তানভীর বিয়ের জন্য রাজি হলো। আমরা সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। 

বিছানায় উঠার আগ মুহূর্তে দরজায় খুট করে শব্দ হলো। তানভীর ভয় পেয়ে বললো, দরজায় কে? ভূত নাকি? 

নীলা মিটিমিটি হাসে। বলে, আজ ঘুমান। বাড়িভর্তি লোকজন। দুষ্টু পোলাপান দরজাতেও কান পেতে রেখেছে। আজ রাতে খেলাধুলা করা সম্ভব না। কে না কে দেখে ফ্যালে!! 

তানভীরের ভয়ঙ্কর মেজাজ খারাপ হয়। সে তার নিজের বিয়ে করা বৌয়ের সাথে খেলবে। সে কি অন্য মেয়ের সাথে খেলবে যে তাকে চোরের মতো খেলতে হবে? এই দেশের মানুষগুলো এমন কেন? 

তানভীর সিদ্ধান্ত নেয়, এই বাড়িতে নতুন বৌকে নিয়ে আর এক মুহূর্তও না। কাল সকালেই ও বৌ নিয়ে হানিমুনে চলে যাবে। এক সপ্তাহ বা তিনদিন না। সে হানিমুন করবে টানা এক মাস। এই একমাস শুধু খেলা হবে। আর কিছু না। 

ঘুমানোর আগে ও তরুকে বলে হানিমুনের কথা। তরু খুশি হয়। ইশ, কাল আসতে এতো দেরি কেন? কোনভাবে কাল সকালকে আজকেই এনে ফেলা যায় না? 

হানিমুনে আসছে শুনে হোটেলের ম্যানেজার বললো, না ভাই, আপনারা এখানে থাকতে পারবেন না। 

তানভীর অবাক হয়ে বললো, কেন? 

তেলতেলে হাসি দিয়ে ম্যানেজার বললো, আমাদের খাটগুলো পুরনো। নতুনদের খেলাধুলার চাপ নিতে পারবে না। আপনি অন্য কোথাও দেখেন প্লিজ। আশেপাশে তো হোটেলের অভাব নাই। আমাদের হোটেল নতুন দম্পতিদের জন্য না। আমাদের হোটেল পুরনো দম্পতিদের জন্য। যারা খেলাধুলার বদলে ঝগড়া করে রাত পার করতে বেশি পছন্দ করে। 

তানভীর আর তরু নতুন হোটেল খোঁজা শুরু করলো। তরু লজ্জা লজ্জা মুখে হঠাৎ বললো, প্রোটেকশন নিয়েছো তো? দেখো কোন একসিডেন্ট যেন না হয় প্রথম দিনেই। 

তানভীর ৩২ জোড়া দাঁত বের করে হাতের বিশাল একটা ব্যাগ দেখায়। এই যে দ্যাখো, ব্যাগ-ভর্তি প্রোটেকশন। 

তরু ভয় পায়। খুশিও হয়। এতো মনে হয় পুরো ফার্মেসিটাই ব্যাগের মধ্যে ভরে নিয়ে আসছে!! অবশ্য এক মাস অনেক সময়। 

হোটেল পাইতে খুব বেশি কষ্ট হলো না। 

এই হোটেলের ম্যানেজার লোকটা ভালো। ঝকঝকে হাসি হেসে বললো, স্যার আমাদের হোটেল আমরা বানিয়েছিই নতুন দম্পতিদের হানিমুনের জন্য। খাটগুলো শক্ত। নড়াচড়া করার সম্ভাবনা নাই। রুম সাউন্ডপ্রুফ। কোনো শব্দই বাইরে যাবে না। 

তানভীর খুশি হয়। বলে, মেঝেটা ভালো আছে তো? সবসময় তো আর বিছানায় খেলতে ভালো লাগবে না, তাই না? 

ম্যানেজার চোখ মেরে বলে, সব ঠিক আছে স্যার। ফোল্ডিং বেড। ইচ্ছামতো পজিশন ঠিক করতে পারবেন। 

তানভীর আর তরু রুমের দিকে রওনা হয়। অপেক্ষার পালা বুঝি শেষ হতে চললো!!

হোটেলের রুমটা তরুর খুব পছন্দ হলো। জানালা খুলে দিতেই আলোর স্রোতে ঝলমল করে উঠলো পুরো ঘর। তানভীর ঝড়ের বেগে গিয়ে জানালা বন্ধ করে দিলো। বললো, পাগল নাকি তুমি? জানালা খোলা রাখলে সাউন্ড যাবে না বাইরে? 

তরু অবাক হওয়ার ভান করে বলে, কিসের সাউন্ড? 

তানভীর বিরক্ত হয়, কিসের সাউন্ড মানে? খেলাধুলার সাউন্ড। ভার্জিন লোকজন নিয়ে এই এক প্রবলেম। আগে খেলো নাই মানলাম। বাট খেলা দেখার তো কথা। নাকি তুমি ওসব দেখোও না? 

তরু মুখ টিপে হাসে। বলে, রেস্ট নেওয়া উচিত না এখন? এতো দূর জার্নি করে আসলাম? 

তানভীর বলে, রেস্টের গুষ্টি বেঁচি। কোনো কথা হবে না। আগে খেলা, পরে সবকিছু। আমি কি রেষ্ট নেওয়ার জন্য বিয়ে করেছি? আমি তো খেলার জন্যই বিয়ে করেছি। 

তানভীর বিছানা সরিয়ে রুমের এক পাশে নিয়ে যায়। তরু খুব বেশি অবাক হয় না। অস্বাভাবিক কিছু না। একেকজনের একেক অভ্যাস থাকে। ওর বিয়ে হওয়া বান্ধবীদের কাছে শুনেছে এসব। তানভীরও হয়তো রুমের মাঝখানে বিছানা রেখে কম্ফোর্ট ফিল করে না। বিছানায় কী আসে যায়? পারফরম্যান্স ই আসল। 

তানভীর বলে, আমার পারফরম্যান্স কিন্তু ভালো। তুমি আমার সাথে তাল মেলাতে পারবা তো? 

তরু মুচকি হাসে। মুখে কিছু বলে না। মনে মনে বলে, কার পারফরম্যান্স কেমন সেইটা তো বিছানাতেই প্রমান হবে। তরু হাতের চুরি খোলে, কানের দুল খোলে, গলার হার খোলে। চুল আলগা করে, শাড়ির আচল আলগা করে। 

তানভীর তখন প্রোটেকশন এর ব্যাগ খুলতে ব্যস্ত।

ব্যাগ থেকে একে একে হেলমেট বের হয়, হ্যান্ড গ্লাভস বের হয়, প্যাড বের হয়। তানভীর ভালো করে হাত, মাথা আর পায়ে প্রোটেকশন পড়ে নেয়। তরু বারবার জিজ্ঞেস করছিলো প্রোটেকশন এর কথা। 

এরপর নিজে ব্যাট হাতে নিয়ে তরুকে বল আগায়া দেয়। তানভীর ছোটবেলা থেকেই আগে ব্যাটিং করে অভ্যস্ত। আজকেও সে আগে ব্যাট করবে। নতুন বউ হলেই আগে ব্যাট করতে দিতে হবে, এই কথা কোথায় লেখা আছে? 

তানভীরের এই অদ্ভুত সাজ দেখে তরু অবাক হলো। তানভীর ওর অবাক হওয়ার কোনো তোয়াক্কা করলো না। বল বাড়িয়ে দিলো তরুর দিকে। 

তরু বললো, বল নিয়ে কী করবো? 

তানভীর বললো, ঢং করো না তরু। এসব ঢং করলেই আমি তোমাকে আগে ব্যাটিং করতে দেবো না। বাসর রাত থেকে আমি এই ক্রিকেট খেলার জন্য ওয়েট করছি। খেলার সঙ্গী পাই না বলেই তো বিয়ে করেছি বৌয়ের সাথে ক্রিকেট খেলার জন্য। যাও বল করো। জোরে করলেও সমস্যা নাই, আমার প্রোটেকশন আছে। 

তরু একবার বলের দিকে আরেকবার তানভীরের দিকে তাকায়। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে ওর দশ সেকেন্ড সময় লাগলো। তারপর তরু বিকট একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। 

তানভীর অবাক হয়, একটু ভয়ও পায়। ও শুনেছে অনেক মেয়েরা খেলার পরেই অজ্ঞান হয়। কিন্তু তরু খেলার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলো কেন? অজ্ঞান বৌয়ের মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতে ঢালতে তানভীর ভাবে, তবে কি তরু আসলে ভার্জিন না?


Powered by Blogger.