১৯৭২ সালে ৮৩ বছর বয়সে যখন অস্কার নিতে মঞ্চে ওঠেন ?
১৯৭২ সালে ৮৩ বছর বয়সে যখন অস্কার নিতে মঞ্চে ওঠেন , টানা বারো মিনিট হাততালির ঝড় বয়ে যায় অস্কার মঞ্চে। অস্কারের ইতিহাসে সেটাই ছিল দীর্ঘতম অভ্যর্থনা। আবেগে প্রায় কিছুই তিনি বলতে পারেননি সে দিন ?
ব্রিটিশ এই কিংবদন্তি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে কুড়ানো তুমুল জনপ্রিয়তাকে সঙ্গী করে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেই দেশ কত চেয়েছে তাকে নাগরিকত্ব দিতে। তিনি নেননি। তিনি কখনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে চাননি। পরে যুক্তরাষ্ট্র একসময় 'কমিউনিস্ট' বলে 'গালি দিয়ে' তার জন্য দরজা বন্ধ করে দেয়। তাই বাকি জীবন কাটানোর জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন সুইজারল্যান্ডকে।
যখন খ্যাতির শীর্ষে তখন একবার দুই দিনের জন্য জন্মভূমি ইংল্যান্ডে গেলেন। আর এই সময়ের মধ্যে ঘটে গেল অবাক কাণ্ড। মাত্র দু’দিনে তাঁর কাছে প্রায় ৭৩ হাজার চিঠি আসে !
তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তাঁর কাছে সৌন্দর্য মানে নর্দমায় ভেসে যাওয়া একটা গোলাপ ফুল। এই যে বীভৎস দ্বন্দ্ব থেকে সৃষ্টি হওয়া সৌন্দর্য, এখানেই বাস্তবতার সব নিষ্ঠুর দরজা খুলে যায়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দুঃসহ শৈশব বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছেন। যেখানে তাঁর মাতাল বাবা, মাকে নির্যাতন করত ছোট্ট শিশুটির সামনেই। একসময় সেই বাবা মাকে ছেড়ে যায়, তাতে সামান্য সময়ের জন্য হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন । কিন্তু কতক্ষণের জন্য? পরেরবার খিদে লাগার আগে পর্যন্ত!
মা কখনও সস্তা নাটকে অভিনয় করতেন, কখনও সেলাই করতেন, কখনও বা মা–ছেলে মিলে ভিক্ষা করতেন। কখনও নরম নিষ্পাপ হাতে দিব্যি চুরি করতেন। এর মাঝেই অসুখে পড়ে ভুগে মারা যান মা। আর তাঁর নির্বাক কমেডি নাড়া দিতে থাকে সমগ্র ইংল্যান্ডকে। তাই তো তিনি বলেছেন, সত্যিকারের কমেডি তখনই করা যায়, যখন নিজের সব দুঃখ, বঞ্চনা সফলভাবে গিলে ফেলা যায়।
আর তাঁর জনপ্রিয়তা ?
রাশিয়ার এক ভক্ত নভোবিজ্ঞানী তাঁর আবিষ্কৃত উপগ্রহের নাম রাখেন ৩৬২৩ চ্যাপলিন ! আর এদিকে জাঁদরেল চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ লুক গদার চ্যাপলিনকে তুলনা করেছিলেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সঙ্গে |
তিনি কমেডিয়ান নন, অভিনেতা নন, সব ছাপিয়ে তিনি মহান শিল্পীর ঢিলেঢালা কোট গায়ে এক তুখোড় বিপ্লবী। তিনি চার্লি চ্যাপলিন |