প্রেগ্যানেন্ট অবস্থায় স্বামী'র কাছ থেকে শ্বশুর বাড়িতে এসেছি আমি
প্রেগ্যানেন্ট অবস্থায় স্বামী'র কাছ থেকে শ্বশুর বাড়িতে এসেছি আমি। আজ জামা-কাপড় মেলতে ছাদে যাচ্ছিলাম এমন সময় আমার ননদ রুপা এসে বললো,
"তুমি এতো বড় সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যাচ্ছো কেনো ভাবি? এগুলো আমার কাছে দেও, আমি নিয়ে যাচ্ছি।"
"লাগবে না রুপু, আমি পারবো।"
" একদম বেশী কথা বলবা না, ভাবি! অতিরিক্ত পাকনামি করে ঝামেলা করো না। বলছি না তোমার কিছু করতে হবে না, তোমার কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকবা।"
রুপা জোড় করেই কাপড়ের বালতিটা নিয়ে মুখ বাঁকিয়ে ছাদে গেলো। আমি মুচকি হেসে রুমে আসলাম। মেয়েটা একটু চঞ্চল স্বভাবেরই। আসার পর থেকে আমার ননদ আমায় কিচ্ছুটি করতে দেয়নি,কিছু করতে গেলেও আমাকে শাসায়।
আমি শুয়ে ছিলাম।কিছুক্ষণ পর আমার রুমে সকালের নাস্তা নিয়ে আসলো রুপা। নাস্তার প্লেটটা আমার মুখের সামনে ধরে কিঞ্চিৎ হেসে বললো,
"নেও, নেও! যতদিন পারো শুয়ে-বসে ননদের হাতের মজার মজার নাস্তা খেয়ে নেও। বিয়ে হয়ে গেলে তো আর পাবে না আমায়। ভেবো না আমি তোমায় ছেড়ে দিবো ভাবি। আমার বাবু হলে তোমাকেও এসব রিভেঞ্জ দিতে হবে, হুহ্!"
ওর কথায় আমি হাসলাম।আলতো হাতে ওর গাল টেনে বললাম,
"খুউব পাকনা হয়ে গেছো-রে রুপু! বিয়ে করার খুব শখ তাই না!এখনো বিয়ে দেইনি তোমাকে এরমধ্যে বাচ্চার চিন্তাও মাথায় এসে গেছে আমার ননদিনীর।"
"চিন্তা হবে না ভাবি! আমি আবার ভবিষ্যতের আদর্শ মা কি-না! আমার আবার ভবিষ্যত বাচ্চা-কাচ্চার জন্য খুব মায়া,খুউব চিন্তা!"
"দাঁড়াও বাঁ'দ'র মেয়ে! আম্মাকে বলে তোমার চিন্তা আমি ছোটাচ্ছি। এ-সব ফাও চিন্তা রেখে পড়াশোনায় মনোযোগী হও রুপা।"
রুপা আরো কিছুক্ষণ আমার সাথে দুষ্টমি করে রান্না চাপাতে গেলো। যাওয়া আগে অবশ্য জিজ্ঞেস করে গিয়েছে, আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করে কি-না, কি রাঁধবো ইত্যাদি ইত্যাদি।
কতক্ষণ আর রুমে শুয়ে-বসে ভালো লাগে। শ্বাশুড়ি, ননদ রান্না করছে আমিও সেখানে গেলাম। রান্না ঘরের পাশাপাশি যেতেই শুনতে পেলাম আমার শ্বাশুড়ি রুপাকে বলছে,
"তুই একটু বউ মাকে বেশীই আশকারা দিচ্ছিস রুপা। সারাদিন এতো রঙ-ঢঙ দেখালে দেখবি একটা সময় ওই মেয়ে আমাদের মা-মেয়েকে দিয়েই সব করিয়ে নিবে।"
"কি যে বলো না আম্মু। ভাবি অসুস্থ! এই সময়ে তার যত্ন নেওয়াও কিন্তু আমাদের দায়িত্ব। আচ্ছা আম্মু, ভাবি যদি তোমার আরেকটা মেয়ে হতো তাহলে কি এসব তাকে বলতে তুমি?"
রুপার উওর শুনে মুহূর্তেই আমার মলিন ওষ্ঠে হাসির রেখা ফুটলো। মেয়ের কথায় আমার শ্বাশুড়ি জবাব দিতে পারলো না। রুপা তার মা-কে জড়িয়ে ধরে পুনরায় বললো,
"শোনো আম্মু? তুমিও এখন থেকে ভাবির দেখা-শোনা করবা, তার সাথে ভালো ব্যবহার করবা। একটা মেয়ের জীবন-মরণ উপেক্ষা করে মাতৃত্বের অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়। এইসময়ের তুমি তার প্রতি এতটুকু বিনয়ী হলে সারাজীবন সেই মানুষটা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে যাবে। মাঝেমধ্যে ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে হয়, ভালোবাসা সম্মান, অর্জন করে নিতে হয়।"
রুপার কথা শুনে আমি আর শ্বাশুড়ির জবাবের অপেক্ষা করলাম না। ওর কথায় আমার মন ভরে গেলো। ভাগ্য করে এমন একটা বোন রুপি ননদ পেয়েছি। প্রেগনেন্সির সময়টা কিভাবে যে চলে গেলো টেরই পেলাম না।
বছর খানিক হলো আমার একটা ছেলে বাবু হয়েছে। আমি এখন শ্বাশুড়ি ননদের সাথেই বাড়িতে থাকি। আমার শ্বাশুড়িও আমাদের মা-ছেলেকে এখন অনেক কেয়ার করে। কিছুক্ষণ হলো নাতিকে নিয়ে কোথায় যেন ঘুরতে গেলো আম্মা। বাড়িতে আমি রান্না করছি, রুপা দু-হাত ভরে মেহেদী দিয়ে বসে আছে। হঠাৎ করে আমার ননদ চিৎকার দিয়ে আমায় ডেকে বললো,
"ভাবি ক্ষুধা পেয়েছে আমার।কিছু খাবার নিয়ে এসে খায়িয়ে দেও তো।"
আমি বিনাবাক্যে নুডলস নিয়ে গেলাম ওর রুমে। দু'জন মিলে গল্প করতে করতে এক সাথে খেয়ে নিলাম। বিকালে চুক্তি হলো আমরা ননদ - ভাবি শাড়ী পড়ে মেলায় ঘুরতে যাবো। কিন্তু আম্মা বাঁধা দিলো, এসব তার পছন্দ নয়। রুপার মনে আক্ষেপ রয়ে গেলো। আমি রুপাকে জড়িয়ে ধরে আম্মার অগোচরে আশ্বাস দিয়ে বললাম,
"চিন্তা করো না, রুপু। আম্মা কোথাও বের হলে একদিন তোমায় আমি নিয়ে যাবো মেলায়।"
পাগলী ননদটা আমার খুশীতে লাফিয়ে উঠলো। আমাকেও নির্দ্বিধায় জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
"তুমি পৃথিবীর সেরা ভাবি! আই লাভ ইউ ভাবি।"
আমি হাসলাম। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
"তুমিও খুব ভালো মেয়ে রুপা। তোমার মতো ননদ যদি সব মেয়ের হতো হয়তো অনেক পরিবারের পারিবারিক কোলাহল মিটে যেতো।"
.
.
দিন যতো যাচ্ছে আমাদের ননদ-ভাবির বন্ধনটা আরো দৃঢ় হলো! এখন আমার সব থেকে কাছে'র বন্ধু আমার ননদ। আমি আমার স্বাধ্যের মধ্যে ওর কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখি না। রুপাও কখনো আমার অবাধ্য হয় না। অচেনা কেউ বলতেই পারবে না , আমাদের সম্পর্কটা শুধু ননদ - ভাবির।
আজকেই আমার প্রিয় রুপুর বিয়ে হয়ে গেলো। ওর বিদায় বেলায় এসে বুকটা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে আমার। বুকের মধ্যে প্রিয় হারানোর হা'হা'কা'র! মনে হচ্ছে আমার আ'ত্মা'টা বেরিয়ে যাচ্ছে, দ'ম বন্ধ হয়ে আসছে। যেমনটা একজন মা তার প্রিয় কন্যাকে বিদায় দিলে নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায়! ও আমার র'ক্তে'র কেউ না তবে আ'ত্মা'র কেউ! আমি কান্নার জন্য কথা বলতে পারছি না। রুপাও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। কান্নার কণ্ঠে আমায় বললো,
"তোমাকে খুব মিস করবো ভাবি।"
আমি নিজেকে সামলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
"ভাবিও তোমায় ভীষণ মিস করবে রুপা। তুমি আমার ননদ নয় আমার আ'ত্মা'র বোন! তোমায় খুব ভালোবাসি রুপা! দোয়া করি, স্বামীর সংসারের তুমি অনেক সুখী হও! সুখী হও আমার বোন রুপা!"