শসা কিভাবে চাষ করবেন এবং অধিক ফলন বাড়াবেন।
"বন্য মুক্ত দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে শসা ভালো হয়।
উর্বর দোআঁশ মাটি যার পিএইচ বা অম্লমান ৫.৫ থেকে ৬.৮ এর মধ্যে সে মাটিতে শসা সবচেয়ে ভালো হয়।
*উপযুক্ত জলবায়ুঃ
শসা সারা বছর হলেও উপযুক্ত তাপমাত্রা ২৫° থেকে ৩০° ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ভালো হয়। ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে ও ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপরে তাপমাত্রায় গাছের বৃদ্ধি ও ফলধারণ ব্যাহত হয়। অধিক তাপমাত্রা, দীর্ঘ দিবস ও প্রখর আলোতে বেশি পুরুষ ফুল উৎপন্ন হয়। বিপরীত অবস্থায় স্ত্রী ফুল আগাম আসে ও বেশি স্ত্রী ফুল ফোটে।
জাত পরিচিতিঃ
শসার জাতঃ
*কাঞ্চন/অলরাউন্ডার-২/কোহিনুর/ডন
*আইসগ্রীণ/জাদু/ময়নামতি
*বনলতা
*দিলশান-২/থাইগ্রীন
*গুডলাক/নয়নতারা/এভারগ্রীন
*আলাভীগ্রীন
*মেসি
*থাইল্যান্ড-১
*তামিম প্লাস
*সোনাই/রুপাই
*কিউট/ডেইজি/সামারগ্রীণ
*গ্রীণলিডার -৯০৯/ফিল্ড কিং/মাহির -৫৮০ (মল্লিকা)
*লাকি/ময়না পাখি/গ্রীণলাইন/গ্রীণমাস্টার/দোয়েল-২
*সুপ্রিম -৭৭৭
বীজ নির্বাচনঃ
পরিপুষ্ট, রোগমুক্ত, পরিস্কার, ও চিটামুক্ত বীজ হতে হবে। এবং সকল বীজের আকার আকৃতি একই জতে হবে।
বীজহার/বীজের পরিমানঃ
সাধারণত শতক প্রতি ১.৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
চারা তৈরি। প্রতি মাদায় ২ টি বীজ/১ টি সবল চারা রোপন করতে হবে। চারার ক্ষেত্রে ১৫-২০ দিনের চারা রোপন করতে হবে।
বীজ রোপনের সময়ঃ
শসা সারা বছর আবাদ করা যায়। তবে ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস বীজ রোপনের করা ভালো।
চারা তৈরি/বীজতলা তৈরিঃ
শসার চারা তৈরির জন্য ৬*৮ ইঞ্চি সাইজের পলিব্যাগে পঁচা গোবর ও মাটি ৫০ঃ৫০ অনুপাতে মিশিয়ে পলিব্যাগ ভরতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২ টি করে বীজ রোপন করা উত্তম।
মুল জমি তৈরিঃ
যেসব জমি উঁচু ও বর্ষার পানি আটকে থাকে না এমন জমি প্রথমে আগাছামুক্ত করতে হবে। তারপরে আড়াআড়িভাবে ৪ থেকে ৫ টি চাষ দিয়ে জমিতে বেড করতে হবে।
বেডের সাইজঃ
প্রতিটি বেড ১.৫ মিটার চওড়া ও জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী লম্বা হবে। পাশাপাশি দুই বেডের মাঝে ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া ও ১৫ সেন্টিমিটার গভীর সেচ নালা থাকবে।
মাদা তৈরিঃ
প্রতি বেডের মাঝে সারি করে ১.৫ (৫ ফুট) মিটার দূরে দৈর্ঘ্য,প্রস্থ, ও গভীরতা ৪৫ সে:মি: মাপে গর্ত করে মাদা তৈরি করতে হবে। বীজ বোনার কমপক্ষে ১০ দিন আগে মাদা তৈরি করতে হবে।
চারা/বীজ রোপণ দূরত্বঃ
শসার বীজ/চারা সারি করে লাগানো হয়। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ১.৫ মিটার ও প্রতি সারিতে চারা লাগাতে হবে ১.৫ মিটার পর পর।
*সার প্রয়োগঃ
জমি তৈরির শেষ চাষে প্রতি শতক জমিতে
গোবর সার ৩০ কেজি
টিএসপি ৩০০ গ্রাম
এমওপি ২০০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০ গ্রাম
দস্তা ৫০ গ্রাম (আলাদাভাবে ৫-৬ দিন আগে)
বোরাক্স ৪০ গ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম ৫০ গ্রাম হারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপনের ৭-১০ দিন আগে প্রতি মাদায়/গর্তে
গোবর ৩০ কেজি
টিএসপি ১২ গ্রাম
ইউরিয়া ১০
এমওপি ২০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
শসা পানির প্রতি খুব সংবেদনশীল। মাটি শুকিয়ে গেলে গাছ ঢলে আসে ও ফুল ঝরে যায়। তাই মাটির ধরন অনুযায়ী খরা দেখলে দ্রুত সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি নিষ্কাশনঃ
শসার জমিতে পানি জমে থাকলে গাছ হলদে হয়ে যায়।
এবং বর্ষাকালে ক্ষেতে পানি জমে থাকলেও শসার জন্য ক্ষতিকর। কয়েক দিন পানি জমে থাকলে গাছের গোড়া পঁচে মরে যেতে পারে। সেজন্য নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
*আগাছা দমন/পরিস্কার
শসার জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। শসার শিকড় মাটির গভীরে যায় না তাই হালকা ভাবে নিড়ানি দিতে হবে।
বিভিন্ন আগাছা শসা বিভিন্ন রোগের আশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করে যেমন- হাতিশুঁড় আগাছা পাউডারি মিলডিউ রোগের বিকল্প পোষক, ঝিলমরিচ মোজাইক ভাইরাস রোগকে আশ্রয় দেয়।
বিশেষ করে মাদায় কোনো আগাছা রাখা চলবে না।
*মাচা/বাউনি/জাংলা তৈরিঃ
শসা আবাদে মাচা/বাউনি/জাংলায় চাষ করতে হয়। শসা গাছ ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলেই মাচা/বাউনি/জাংলা তৈরি করে দিতে হবে। মাচা/জাংলা/বাউনি মাটি থেকে ১.৫ মিটার উঁচু হবে। বাঁশের খুঁটি ও জিআই তার বা নাইলনের রশি দিয়ে মাচা/বাউনি/জাংলা তৈরি করা যায়।
ফসল তোলা ও ফলন
জাতভেদে শসার বীজ রোপন করার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই শসা উত্তোলন করা যায়। ৩-৪ দিন পরপর শসা উত্তোলন করতে হয়।
*জীবনকালঃ
শসার জীবনকাল ৮০ থেকে ১২০ দিন হতে পারে।
মোঃ ফরিদুল ইসলাম
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা
ভাইয়ের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত?