আমার স্ত্রী তার বাপের বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকবে এই ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ নয়।


আমার স্ত্রী তার বাপের বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকবে এই ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ নয়।

আমার স্ত্রী তার বাপের বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকবে এই ব্যাপারটা আমার পছন্দ মোটেও পছন্দ নয়। এতোই যদি মা বাবাকে দেখার প্রয়োজন হয় তাহলে সকালে যাবে বিকালে চলে আসবে। রাতে থাকার তো কোনো প্রয়োজন দেখি না। সকাল থেকেই আমার স্ত্রী বাপের বাড়ি যাওয়ার বায়না করছে, সে-ই সুবাদে সকালের নাস্তায় আলু পরোটা আর কষা মাংশ বরাদ্দ হয়েছে। প্লেটে খাবার দিতে দিতে মায়াবতী বললো, 


--' আজ কিন্তু আমি মা'য়ের কাছে যাবো। মা'কে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে। কতদিন হয়ে গেলো মা'কে দেখি না। "


আলু পরোটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললাম, " কই রাতেও তো ভিডিও কলে মা'কে দেখলে, এর থেকে যদি বলতে যে আব্বুকে দেখো না মেনে নেওয়া যেতো। এমন মিথ্যা কথা বললে কি আমি তোমাকে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারি বলো?"


টেবিলের উপর খুব জোরে কিছু রাখার শব্দ হলো, মায়াবতী সেমাইয়ের বাটিটা টেবিলের উপর রেখে রান্নাঘরের দিকে হাঁটা ধরলো। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় টেবিলকে জিজ্ঞেস করি, বাবা তুই আমাকে অভিশাপ দিস না তো। আমার জন্যই মায়াবতী তোর উপর বাটি প্লেট দিয়ে এতো জোরে আঘাত করে। টেবিলের কথা চিন্তা করা বাদ দিয়ে নিজের খাওয়ায় মন দিলাম। মেয়েটার রান্নার হাত বেশ দারুণ। খাওয়া শেষ করে মায়াবতী ডাক দিলাম। দুই তিন ডাক দেওয়ার পর কেউ জোরে চিৎকার করে বললো, 


--" কি বলবে বলো। আমি কালা হয়ে যাইনি এখনো।"


আমি মুচকি হেসে ও-র হাতে পাঁচশ টাকার একটা নোট দিয়ে বললাম, " বিকালে বাড়ি চলে আসবে। রাতে কিন্তু থাকা যাবে না। "


মায়াবতী মুখ বেঁকিয়ে চলে গেলো। আমিও মুচকি হেসে অফিসে চলে গেলাম। বাড়ি থেকে অফিস যেতে পঁচিশ মিনিট সময় লাগে হয়তো। অফিসে পৌঁছানোর আগেই বউয়ের কল।


--" আচ্ছা আমি রওনা দিচ্ছি। ফ্রিজে খাবার রাখা আছে, প্রয়োজন হলে গরম করে খেয়ে নিয়েন জনাব। "


--" রাতে খাওয়ার জন্য তুমি শাশুড়ি মা'য়ের রান্না করা খাবার নিয়ে আসবে। রাতে থাকার কথা চিন্তাও করবে না বলে দিলাম। "


--" কি একটা বর আমার কল রিসিভ করে সালামও দেয় না। হুহ! "


--" সাবধানে যেও, আসসালামু আলাইকুম। "


--" ওয়ালাইকুম আসসালাম। "


উনার আমার সাথে কোথাও যেতে গেলে ঘন্টাখানেক সময় লাগে রেডি হতে অথচ এখন দেখো। বুঝি না সব মেয়েরা এমন নাকি শুধু বউরাই এমন। বিকালে দিকে বাড়ি ফিরে দেখলাম মায়াবতী এখনো বাড়িতে আসেনি। বাইরে প্রচন্ড মেঘ করছে, হয়তো বৃষ্টি নামবে নয়তো ঝড় আসবে। সবকিছু গুছিয়ে শশুরবাড়ির দিকে রওনা দিবো বলে ঘর থেকে বের হলাম। আজ মায়াবতী কিছুতেই আসবে না। এ মেয়ে বাপের বাড়ি গেলে আসতেই চায় না। প্রতিবার আমাকে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। এবারও হয়তো একা আসবে না। আমাকেই যেতে হবে, তাছাড়া এমন দিনে শাশুড়ির হাতে কষা মাংস আর খিচুড়ি মিস করাও ঠিক হবে না। 

ঘর থেকে বের হতে পাশের ফ্লাটের কাকিমা বললেন,


--" এই ঝড়বৃষ্টি আসবে এমন সময় কোথায় যাও?"


--" এই তো কাকি শশুর বাড়ির দিকে, মায়াবতী সকালে গেলো তাই আমি এখন। "


--" কি বউ পাগলা ছেলে রে বাবা তুমি! একদিনও বউ ছাড়া থাকা যায় না?"


--" যে মানুষটা আমাকে গুছিয়ে রাখে তাকে ছাড়া থাকি কি করে বলুন তো!"


কাকিমা মুখ বেঁকিয়ে চলে গেলো। আমি মুচকি হেসে রওনা দিলাম। আকাশে মেঘের পরিমাণ বাড়ছে, চারদিকে সন্ধ্যায় অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। এমন দিনে খিচুড়ি মিস করাই যাবে না। বাজার থেকে আধা কেজি ডাল আর এক কেজি গরুর মাংস কিনে নিলাম। মানুষ শশুর বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যায়, আমি এইসব নিয়ে যাচ্ছি। শশুর শাশুড়ির ডায়াবেটিস হলো কিনা সেদিকে নজর রাখা দরকার আজ-কাল। 


আমার এই স্বভাবটার জন্য প্রায় সকলেই আমাকে নিয়ে সমালোচনা করে, আমি নাকি বউ পাগলা আরো কত কি! কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকদের যে চাইলেই গরুর গোশত আর খিচুড়ি খাওয়া সম্ভব হয় না তা আমি বুঝি। এতো বিবেকহীন এখনো হয়ে পারিনি। 

পৌছাতে পৌছাতে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে এলো, শালা বাবু তার বোনকে বলেছে, " আপু তোর বর আজ আর আসবে না। "


--" কেন শালাবাবু আমি আসলে বুঝি তুমি অখুশি হয়ে যাও। "


--" দেখ আপু তোর বউ পাগলা বর এসে গেছে, "


--" তুমিও বউ পাগলা হবে শালাবাবু, আমার বাতাস লাগছে যে। "


শাশুড়ি মা দৌড়ে এলেন। সকলের সাথে কথা বলছি কিন্তু এর মাঝে মায়াবতীর নিরবতা, আর ও-র ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটা স্পষ্ট চোখে পড়ছে। 


" মায়াবতী তুমি আমার প্রিয়জন, তবে তার থেকেও বেশি প্রয়োজন। তুমি না থাকলে আমি সকালে নিশ্চিত হয়ে পাঁচ মিনিট বেশি ঘুমাতে পারি না। তিনবেলা সাজানো খাবারও জোটে না। মা বাপ হারা এতিম ছেলেকে তোমার মতো করে কেউই আগলে রাখে না। তাই তোমাকে ছাড়া থাকতেও মন চায় না। "


মনে মনে কথাগুলো বললাম। ও মা মায়াবতী আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। বুঝে গেলো নাকি কি বললাম!

Powered by Blogger.